দুর্নীতির মামলায় দশ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত সরকার দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হাজি মো. সেলিম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েরে (বিএসএমএমইউ) কেবিনে রয়েছেন। কারাকর্তৃপক্ষ বলছে, হাজি সেলিমের নানান শারীরিক সমস্যা রয়েছে। তাই আদালতের নির্দেশেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সোমবার (২৩ মে) সকালে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি ৫১১ নম্বর কেবিনে ভর্তি রয়েছেন। সেখানে কারারক্ষীদের প্রহারাতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তাকে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, ডিভিশন-১ অনুযায়ী হাজি সেলিম বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, তাকে কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান ও কারাগারের তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নতমানের হাসপাতালে ‘বেটার ট্রিটমেন্ট’ দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল রবিবার (২২ মে) দুপুর ২টার দিকে ৩ ছেলেকে নিয়ে হাজি সেলিম আদালত প্রাঙ্গণে যান। সেখানে আগে থেকে তার অনুসারীরা অপেক্ষা করছিলেন এবং নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর হাজি সেলিম প্রবেশ করেন আদালত ভবনে। পরে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন হাজি সেলিম। এরপর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এর বিচারক শহিদুল ইসলাম জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাজি মো. সেলিম হাইকোর্টের নির্দেশে গতকাল রবিবার আত্মসমর্পণ করে জামিনের দরখাস্ত দাখিলপূর্বক আপিল দায়েরের শর্তে জামিনের আবেদন করেন। পাশাপাশি কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদার জন্য এবং কারাগারের তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নতমানের হাসপাতালে ‘বেটার ট্রিটমেন্ট’ আদেশের প্রার্থনা করেন।
আদালত জামিন বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী ও দুদক পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন। পরে আদালতের আদেশে বলা হয়, দাবি মতে দরখাস্তকারী আসামি একজন সংসদ সদস্য এবং ভালো চরিত্রের অধিকারী। তার সামাজিক মর্যাদা, আসামি যে অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, তার ধরন ইত্যাদি বিবেচনায় তাকে জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশন-১ দেওয়া কিংবা উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো।
উল্লেখ্য, দুদকের করা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের যে মামলায় হাজি সেলিমের সাজা হয়েছে, সেটি দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে। পরের বছর ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালত তাকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। হাজি সেলিম ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তার সাজা বাতিল করে রায় দেন। দুদক তখন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করলে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। সেই শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি ধারায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখেন এবং অন্য ধারায় ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। ওই বেঞ্চের দুই বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং একেএম জহিরুল হকের সইয়ের পর ৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজি সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।